দুরন্ত জিনের জননী
নন্দিতা দাস
একটি মানুষের দেহ কোটি কোটি কোষের সমন্বয়ে গঠিত। ঠিক অনেকটা হাজার হাজার ইট দিয়ে তৈরী ভবনের মত। কোষ আকারে এত ক্ষুদ্র যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। তবে এখানেই শেষ নয়। এই কোষের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য অঙ্গাণু যা কোষের সার্বিক কাজ সম্পাদন করে। কোষে অবস্থানকারী এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাণু ডি.এন.এ যা নিউক্লিয়াসের ক্রোমোসামে থাকে। ভাবছো এসব অঙ্গাণুগুলো তোমার অজানা। হয়তোবা তোমরা এগুলো দেখনি, তবে সকল জীবদেহে কোষের অঙ্গাণুসমূহ বিদ্যমান। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে কোন কোষকে দেখলে গাঢ় গোলাকার বিন্দু দেখা যাবে যা নিউক্লিয়াস। অধিক শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের মধ্যে সূতার মত ক্রোমাসোম দেখা যায়। এই ক্রোমাসোমেই অবস্থান করে ডিএনএ। ডিএনএ তে রয়েছে জিন যা জীবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে । এই ধর তোমার গায়ের রঙ ফর্শা, অনেকের কালো, চোখ,মুখ,হাত,পায়ের আকৃতি সবকিছুর জন্য বিশেষ বিশেষ জিন দায়ী। তবে ডিএনএ এর মধ্যে এমন কিছু জিন আছে যারা ক্রোমোজোমের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লাফিয়ে যেতে পারে। একে বলা হয় জাম্পিং জিন। বারবারা ম্যাকক্লিন্টক নামক একজন মার্কিন জীববিজ্ঞানী এই জাম্পিং জিন আবিষ্কার করেন। ১৯০২ সালের ১৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের হার্টফোডে বারবারার জন্ম। ছোট ভাইয়ের জন্মের পর তাকে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখানেই তিনি প্রকৃতির প্রেমে পড়েন,আর স্বপ্ন দেখেন জীববিজ্ঞানী হওয়ার। ১৯২১ সালে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সূত্র ধরেই বংশগতি নিয়ে গবেষণার যাত্রা শুরু হয়। বারবারা ভুট্টার দানার উপরের রঙিন দাগ ও ফোটার কারন উন্মেচন করতে গিয়ে ক্রোমোজোমের একটি অংশ চিহ্নিত করেন যা একই ও বিভিন্ন ক্রোমোজোমের মধ্যে স্থানান্তর হতে পারে। এর নাম দেন ট্রান্সপোজেবল জেনেটিক এলিমেন্ট বা জাম্পিং জিন। কাজের স্বীকৃতিস্বরপ আবিষ্কারের ৩৫ বছর পর ১৯৮৩ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন।