ভোলা দা'র সেল্ফি নেতা!
দুপুরের ক্লাস শেষ করে ভোলা দা ভাবলো আজ ভিন্ন কিছু করবে। ভালো লাগার বিষয় বলতে বিজ্ঞানের কিছু বই পড়বে। এই বিষয়টা ভোলা দা'র কাছে বেশ আগ্রহের। নিজের কম্পিউটার নাই বলে পাশের হলের বন্ধুর রুমে যেতে হলো। কিছদিন হলো ভোলা দা'র বন্ধু কম্পিউটার কিনেছে। ভোলা দা প্রায়ই তার কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন বিষয় পড়ে, ডাউনলোড করে। কম্পিউটার অন করে ভোলা দা নেচার পেজে একটা লেখা পড়ছিল। ভাবলো, আজ কিছু সাম্প্রতিক লেখা ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করে নিয়ে যাবে।
হঠাত ভোলা দা'র বন্ধুর রুমমেটের প্রবেশ। সে ভোলা দা'র সিনিয়র ভাই, বিশাল নেতা, সারাদিন রাজনীতি, বড় নেতাদের সাথে মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাজনীতি ছাড়া তার কাছে সব নিরর্থক। তার মতে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে, রাজনীতি ছাড়া এসব বিজ্ঞান, গবেষণা, লেখালেখীর কোনো মূল্য নেই, তার ভাষায় 'বেল' নাই। ভোলা দা অবশ্য এই নেতার দর বুঝতে পারে না। সারাদিন পড়াশোনা, টিউশনি আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে থাকা মানুষ কিভাবে এই বিখ্যাত মানুষকে চিনবে। ভোলা দা'র বন্ধু ফেসবুকে দেখালো তার রুমমেট কত বড় নেতা, ফেসবুকে শত শত দেশ বরেণ্য রাজনীতিবিদের সাথে তার সেল্ফি।
সেই বড় নেতা রুমে ঢুকেই হাঁক দিল, কি করিস তোরা? এই মদন, পানি আনিস নি কেন?
আসলে ভোলা দা'র বন্ধু মদন নেতার চাকর না হলেও, নেতার আচরণ অনেকটা মনিবের মত। এরপর নেতা সোজা এলো কম্পিউটারের পাশে, ভোলা দা'র দিকে তাকিয়ে বলল, কি রে, তুই এখানে কেন? আমার রুমে কি? আমার কাছে এসে লাভ নাই, আমি ক্যাম্পাসের রাজনীতি করি না, আমার চিন্তা কেন্দ্র। যদিও ভোলা দা'র রাজনিতী নিয়ে কোনো আগ্রহ নাই, কারণ এই বিষয়টা সে বুঝে না। ভোলা দা'র মতে যেটা বুঝ না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামিও না।
ভোলা দা'কে সরিয়ে নেতা বসল কম্পিউটারের সামনে, ফেসবুকে লগ ইন করল। ভোলা দা'কে নেতা বলল, আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কি করিস এসব, এসব বিজ্ঞান ফিজ্ঞানের দাম আছে? লাভ কি এসব করে? আর তুই যেন কোন সংগঠনে আছিস, উনি কোন দল করে, আমার কথা বলিস তোর স্পেশাল কেয়ার নেবে।নেতার কথার দাপটে ভোলা দা'র কিছু বলার সুযোগ নেই, শুধু ধীরে ধীরে বলল, ভাই, উনি অনেক বড় মাপের বিজ্ঞানী ও লেখক, রাজনীতি করেন না। তাচ্ছিল্যের সুরে নেতার উত্তর- তাহলে আর কি, এসব লোকের কোনো 'বেল' নাই।
কথা বলতে বলতে নেতা মেসেঞ্জার থেকে কিছু ছবি ডাউনলোড দিল, বলদ ভোলা দা'কে নিজের সব ছবি দেখাচ্ছে, আর ব্যাখ্যা করছে। ভোলা দা কাউকে চিনে না। শুধু দেখছে সব ছবির পাশের মানুষটি হলেন পাশে বসা নেতা।
নেতা একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করল। একজন জিন্স টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি, চেয়ারে বসা, হাতে সিগারেট।
ছবি পোস্ট করে কাকে যেন কল দিল নেতা। আর ইশারায় ভোলা দা'কে বলছে, ভাইকে কল দিচ্ছি, দেখিস কি বলে, উনি আমার আপনা ভাইয়ের মত।
বুদ্ধ ভোলা দা কিছুই বুঝছে না, শুধু হা করে বসে আছে, ফোনে কি বলে শোনার জন্য, যদিও ফোন লাউডে দেয়া না, তবে পাশ থেকে কথা বোঝা যায়৷
-হ্যালো, ভাই৷ কেমন আছেন? ভাই, একটা ছবি দিছি ভাই, সেই ছবিটা, আপনি চা খাচ্ছিলেন, যা লাগছে ভাই, আজকের গেঞ্জি আর জিন্স যা মিলছে ভাই, পুরাই সালমান খান ভাই; না না, শাহরুক খান ভাই, আর চশমটা! ভাই সেই অবস্থা৷ ভাই কোথথেকে কিনেছেন এই চশমা? আমি ভাই আপনার সেই ফ্যান, আপনার পুরাই অনুকরণ করতে চাই, আপনার হাসি, কথা বলা ভাই, এমন নেতা লাখে একটা ভাই।
--আচ্ছা, ধন্যবাদ। দাড়া দেহি কি দিছস।
কিছুক্ষণ পর নেতার সেই ভাইয়ের ফোন.....
--ওই, বা........(মিউট থাকবে), কি ছবি দিছস এটা, আমার হাতে সিগারেট, শা.......(মিউট থাকবে) দেখস না, আবার আমারে ট্যাগ করছোস, জানিস না, ধুমপান মাদকের বিপক্ষে আমরা, হা......(মিউট থাকবে) দ্রুত ডিলিট কর।
-ভাই, ভাই ভাই, সরি ভাই, ভাই, ভাই, বুঝি নাই এডিট করছি ভাই।।
মুখ কালো নেতা ভোলা দা'র দিকে চেয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে হাসি হাসি ভাব এনে বলল,
--দেখছিস ভাই আমাকে কত ভালোবাসে, আপনা ভাইয়ের মত ভুল ধরিয়ে দেয়, শাসন করে।
ভোলা দা ওদিকের ব্যক্তির কিছু কথা বুঝেছিল। কিছু না বলে ভোলা দা নিজ হলের দিকে পা বাড়ালো। পিছনে একবার তাকিয়ে দেখল,
-নেতা এক মনে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে, মুখে মুচকি হাসি, ফোনে নম্বর ডায়াল করছে, হয়তো অন্য কোনো ছবি, অন্য কোনো নেতা,অন্য বাক্যমালা নিয়ে আবার তার গল্প শুরু হবে...........