-->

প্রাণের খোঁজে, মঙ্গলের পথে !



রফিকুল ইসলাম
সৌরজগতের সপ্তম বৃহত্তম গ্রহ মঙ্গল। পৃথিবীর প্রতিবেশি এই গ্রহ লাল গ্রহ নামে পরিচিত। এর ব্যাস ৬৭৮৭ কি.মি এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবী পৃষ্ঠের ৩৭.৫ ভাগ। ১৬০৯ সালে ইতালির বিজ্ঞানী গ্যালিলিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মঙ্গল পর্যবেক্ষণ করেন, যা জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার হিসেবে গণ্য করা হয়। এর ৫০ বছর পর ডাচ্‌ বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হিউজেনস আরও উন্নত টেলিস্কোপ ব্যবহার করে মঙ্গলের টপোলজিক্যাল নকশা আঁকেন।


মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে এমন সংবাদ জানা গেছে বহু আগে। নিয়মিত গবেষণায় অংশ নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি মঙ্গলে বাস করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। আসলেই কি মঙ্গলে প্রাণ আছে? এই সত্য অনুসন্ধানে গবেষণার শেষ নেই। চলছে বিভিন্ন দেশের মহাকাশযান পাঠানো।
ইতোমধ্যে ফনিক্স ,মেরিনারের মত নভোযান পাঠানো হয়েছে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। এখনও মঙ্গলের বুকে অবস্থান করছে অনেকগুলো নভোযান।  মঙ্গলের মাটিতে বসে কাজ করছে নাসার দু’‌টি মহাকাশযান কিউরিওসিটি আর ইনসাইট। অক্ষরেখা থেকে মঙ্গলের ওপর নজরদারি চালাচ্ছে ভারতের একটি, আমেরিকার তিনটি, ইউরোপের দু’‌টি মহাকাশযান। সম্প্রতি এই  ক্লাবের সদস্য হয়েছে সংযুক্ত  আরব আমিরাত এবং চীন।

আরববিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গলে অভিযান শুরু করল সংযুক্ত আরব আমিরাত। ‘হোপ’ বা ‘আশা’ নামের মঙ্গলযানটি জাপানের তানেগাশিমা মহাকাশকেন্দ্র থেকে ২০ জুলাই ২০২০ দুপুরে ওড়ানো হয়। ৪৯ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই ‘আশা’ পৌঁছবে লালগ্রহের কক্ষপথে।  
চাঁদের পর এবার মঙ্গলে তিয়ানওয়েন -১ নামে নভোযান পাঠালো চীন।  গত ২৩ জুলাই, ২০২০ হেইনান দ্বীপের ওয়েনচ্যাং মহাকাশ কেন্দ্র থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে তিয়ানওয়েন -১।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ জুলাই ২০২০ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যনাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে লাল গ্রহের পথে উড্ডয়ন করবে পারসেভারেন্স রোভার। পারসেভারেন্স রোভার অ্যাস্ট্রোবায়োলজি মিশনের অংশ হিসেবে লাল গ্রহে আদি প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজ করবে। এটি মঙ্গলের অতি প্রাচীন নদী ডেল্টা এবং জেজেরো ক্রেটার হ্রদে অবতরণ করবে। কোটি কোটি বছর আগে এগুলোতে জল ছিল। অবতরণের আগে গ্রহের লাল আকাশ ভেদ করে ছুটতে হবে, যা সবথেকে বিপজ্জনক। একে বলা হয় ‘‌সাত মিনিটের ত্রাস’‌। পাশাপাশি পরবর্তীতে গবেষণার জন্য মঙ্গল পৃষ্ঠের মাটি ও শিলা সংগ্রহ করবে। সেখানে রেখে আসবে মহাকাশচারীর পোশাক। বিজ্ঞানীরা দেখতে চান, মঙ্গলের আবহাওয়া, পরিবেশের সঙ্গে ওই পোশাকের উপাদান আদৌ মানিয়ে নিতে পারছে কিনা।

২০২৪ সালে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠাবে নাসা। সেখান থেকে ২০৩০ সালে মঙ্গলে পাড়ি দেবে মহাকাশচারীরা। তার আগে মঙ্গলের পরিবেশ, আবহাওয়া, জমি মেপে রাখছে। হয়তোবা এটাই হতে পারে মানব সভ্যতার মঙ্গলে পারি জমানোর পদক্ষেপ। তাহলে কি সত্যিই আমরা পৃথিবী নামক গ্রহ ছেড়ে অন্য গ্রহে পাড়ি জমাচ্ছি ?  
পারসেভারেন্স রোভারটির উড্ডয়ন লাইভ দেখতে নাসার ইউটিউব চ্যানেলে চোখ রাখতে পারেন –



সূত্র: নাসা ওয়েবসাইট, সিএনএন, বিবিসি, আমাদের সময়! 


No comments

Powered by Blogger.