-->

পাটের বিছা পোকা দমন পদ্ধতি

 

পাট বাংলাদেশের প্রদান অথর্করী ফসল। পোট উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ সোনালি আঁশের দেশ নামে পরিচিত। দেশের আবহাওয়া পাট চাষের উপযোগী। বাংলাদেশেল কৃষকরা বেশ আগ্রহের সাথে প্রতিবছর খরিপ-১ মৌসুমে পাট চাষ করতে থাকেন। পাট চাষে যে সকল রোগ পোকামাকড় আক্রমণ করে তার মধ্যে অন্যতম বিছা পোকা। প্রতিবছর এই পোকার আক্রমণে পাটের বেশ ক্ষতি হয়। পাটের বিছা পোকা দমনে সঠিক সম্পর্কে লিখেছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ আবুল বাশার

 পোকা  চেনার  উপায় :

পূর্ণবয়স্ক পোকা একটি মাঝারী আকারের হালকা বাদামী রং এর মথ। এদের পাখায় কালো ফোঁটা আছে। স্ত্রী মথ পাটের পাতার উল্টো দিকে গুচ্ছকারে ডিম পাড়ে। প্রথমে ডিমের রঙ সবুজ ক্রমশঃ বাদামি ও পরে কালো রঙ ধারণ করে। বাচ্চা কীড়া হালকা সবুজ বা হলুদ বর্ণের হয় এবং পূর্ণবয়স্ক কীড়া কমলা বা গাঢ় হলুদ রঙের হয়। লম্বায় ৪-৫সেমিঃ ও চওড়া ০.৮ সেমিঃ ।পাটের বিছা পোকার (Spilosoma obliqua) কীড়া ৬ দিন পর্যন্ত পাতার উল্টো পিঠের সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মত করে ফেলে। প্রথমে ২/১ টি গাছের পাতা খাওয়া শুরু করে। তারপর সারা মাঠে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প দিনের মধ্যেই জমির পুরো পাতা খেয়ে সাবাড় করে দেয় এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।

 ক্ষতির ধরনঃ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পর থেকে এরা পাতার নিচে থাকে ও পাতার সবুজ অংশ খেয়ে পর্দার মতো করে ফেলে। দলবদ্ধভাবে ৬-৭ দিন থাকার পর এরা গাছের সব পাতায় ছড়িয়ে পড়ে ও সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ অবস্থায় আক্রান্ত পাতা অনেক দূর থেকে সহজেই চেনা যায়। বড় হবার সাথে সাথে এরা সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। আক্রমণ বেশি হলে এরা কচি ডগা পর্যন্ত খেয়ে গাছকে পাতাশূন্য বা ডাটাসার করে ফেলে ।ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও আঁশের ফলন কম হয়।এ পোকা পাটের মুখ্য পোকা হিসেবে বিবেচিত।

 আক্রমণের পর্যায় : চারা, পূর্ণ বয়স্ক পোকামাকড়

জীবনকাল : লার্ভা, কীড়া কীড়ার ৬টি ধাপ রয়েছে যার প্রতিটিই পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। মথ সরাসরি কোন ক্ষতি করে না বরং বংশবৃদ্ধি করে। প্রথম ধাপের বয়স ১-৩ দিন, ২য় ধাপের ৪র্থ-৬ষ্ঠ দিন, ৩য় ধাপের ৭ম-৯ম দিন, ৪র্থ ধাপের ১০-১৩ দিন, ৫ম ধাপের ১৪-১৭ দিন এবং ৬ষ্ঠ ধাপের বয়স ১৮-২০ দিন। এরপর পিউপা অবস্থায় ৯-১০ দিন শুকনো পাতা বা মাটির গর্তে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। মে মাস হতে আগস্টের শেষ পর্যন্ত সময়ে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।

 পোকার আক্রমণের পূর্বে করণীয়:

পাট ক্ষেতের আশে পাশে বা অন্য আগাছা থাকলে তা পরিস্কার করা। বিছা পোকা যাতে এক ক্ষেত হতে অন্য ক্ষেতে ছড়াতে না পারে সে জন্য প্রতিবন্ধক নালা বা ড্রেইন করা যায়।

পোকার আক্রমণের পর করণীয়:

ডিমের গাদাসহ পাতা এবং দলবদ্ধ কীড়া সহ পাতা সংগ্রহ করে পা দ্বারা চেপে মেরে ফেলা অথবা গর্তকরে মাটিতে পুঁতে ফেলা। প্রাথমিকভাবে পাটের পাতায় ডিমের গাদা বা কীড়া দেখলে তা তুলে পায়ে মাড়িয়ে বা গর্তে চাপা দিয়ে মারা বা কেরোসিন মিশ্রিত পানিতে (১:২০) ডুবিয়ে মেরে ফেলা। মথ দমনের জন্য আলোক ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে, পাট গাছের উচ্চতা ৩ ফুট পর্যন্ত প্রতিগাছে ২টি এবং ৪ ফুট পর্যন্ত ৪টি বিছাপোকা দেখা গেলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে, যেমন: ** ল্যামডা-সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের #ক্যারাটে ২.৫ ইসি; অথবা জুবাস ২.৫ ইসি; অথবা #ফাইটার প্লাস @ ১ মিলি/লি. হারে পানিতে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করা যেতে পারে; অথবা ** কার্বারিল গ্রুপের #সেভিন ৮০ wp (ap-৩৩৮) @ ৩.৪ গ্রাম/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করা যেতে পারে; অথবা ** সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কট ১০ ইসি (এপি-৬৩৯); অথবা #রিপকর্ড ১০ ইসি; অথবা #সিমবুশ ১০ ইসি; অথবা শেফা ১০ ইসি (এপি-১০৭৯) বা #নাইট্রো @ ১ মিলি/লি. পানি হারে মিশিয়ে গাছে ভালভাবে স্প্রে করা যেতে পারে। পাটের বিছা পোকা দমনের জন্য #হেয়াজিনন বা #ডায়াজিনন ৬০% ইসি, #নূভাক্রন ৪০% ইসি, ইকালাক্স ২৫% ইসি ১.৫ মিলি ঔষধ ১ লিটার পানিতে বা ১৮ মিলি ঔষধ ১২ লিটার পানিতে মিশিয়ে পাট কাটার পর ভালকরে চাষ দিতে হবে যাতে করে আবর্জনা/মাটিতে লুকিয়ে থাকা পিউপা মারা যায়। 

নোট: ক্যারাটে, রিপকর্ড, নাইট্রো ,ডায়াজিনন ভাল কাজ করে বলে কৃষকগণ হতে জানা যায়।

 

No comments

Powered by Blogger.