-->

ব্যাকটেরিয়ার অজানা রহস্য উন্মোচন করেছেন যে বিজ্ঞানী

প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. বনি এল. ব্যাসলার ১৯৬২ খ্রিস্ট্রাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ব্যাকটেরিয়ার অজানা রহস্য নিয়ে গবেষণা করছেন। গত বিশ বছরের বেশি সময়ের ধরে গবেষণায় তিনি ও তার দল (যাদেরকে তিনি গ্যাং বলেন) ব্যাকটেরিয়ার পারস্পারিক যোগাযোগ প্রক্রিয়ার অজানা রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের মতে ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে। এই পদ্ধতির নাম হলো কোরাম সেনসিং।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ড. ব্যাসলার জৈবরসায়নে স্নাতক ডিগ্রি এবং জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি থেকে জৈবরসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ গবেষণা জীবনে তিনি অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন বৃত্তি, ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের সদস্যপদ লাভ অন্যতম। ২০১০-২০১১ মেয়াদে তিনি আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগের অধ্যাপক। বিখ্যাত বিজ্ঞানী
ড. বনি এল. ব্যাসলারের মুখোমুখি হয়েছিলেন বিশ্বখ্যাত ক্যাম্পবেল বায়োলজির লেখক দল, কথা বলেছেন তার গবেষণা নিয়ে। 

 বিজ্ঞানের প্রতি আপনার আগ্রহ কীভাবে তৈরি হল?

প্রকৃতি, ধাঁধা ও রহস্যমূলক বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেশি। এছাড়াও আমি সবসময় ছবি আঁকতে ভালোবাসি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় আমার জেনেটিক্স ও জৈব-রসায়ন কোর্স নেওয়ার সুযোগ
হয়েছিল। সেই সময় আমি গবেষণাগারে ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছিলাম। এরপর জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় জৈব রসায়নের অনেক বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। বিশেষ করে সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া নিয়ে পড়াশোনার ফলে প্রাণরসায়ন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করেছি।  এরপর আমি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করে। আমার গবেষণার বিষয় ছিল কেমোট্যাক্সিস। খাবারের উৎসের দিকে বা ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতিতে কোনো একটি জীবের গতি প্রকৃতিকে কেমোট্যাক্সিস বলে।

কোষ নিয়ে গবেষণায় ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের সুবিধা কি?

গত একশো বছর ধরে অণুজীববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হলো ব্যাকটেরিয়া। ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে এবং এরা যেকোনো নির্দিষ্ট কোষের ক্লোন তৈরি করতে পারে। এছাড়াও জিনতাত্ত্বিক ও জৈবরাসায়নিক গবেষণায় খুব সহজে এদেরকে বিশ্লেষণ করা যায়। অণুজীববিদ্যায় আমরা প্রোটিন, জিন ও অন্যান্য অণু বিষয়ে পড়াশোনা করি। তবে এর অধিকাংশই ব্যাকটেরিয়ার ওপর পরিচালিত গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য নির্ভর। জৈব অভিব্যক্তির ধারায় দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়ার সাথে মানুষ ও অন্যান্য জীবের যথেষ্ট মিল রয়েছে। জীবের অভিব্যক্তির প্রথম ধাপে ব্যাকটেরিয়া, মানুষ ও অন্যান্য জীবে একই ধরনের পরিবর্তন হয়েছিল। এর মধ্যে মানুষের পরিবর্তনের মাত্রা অধিক ছিল। ফলে মানবদেহে জটিল সব অণুর সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় মানুষের গঠনগত বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত জটিল। কিন্তু আপনি যদি জীবনের প্রাথমিক উপাদানগুলো সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানার এমন সুযোগ আমার হয়েছিল। ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করে নতুন নতুন অজানা তথ্য জানতে পেরেছিলাম। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমার ব্যক্তিত্ব উন্নত হয়েছে। এমনকি আজ অবধি আমি প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি।

কোরাম সেন্সিং সম্পর্কে আপনি কীভাবে জানেন? 

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণা চলা অবস্থায় একদিন আমি মাইক সিলভারম্যানের বক্তব্য শোনার সুযোগ পাই। সিলভারম্যান হলেন সান ডিয়াগোর আগুয়োরন ইনস্টিটিউটের গবেষক। ‘ব্যাকটেরিয়া কীভাবে পরস্পরের সাথে কথা বলে ও নিজেদের সংখ্যা গণনা করতে পারে’ এই বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করছিলেন। সিলভারম্যান Vibrio fischeri নামক সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। এই ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক প্রাণির দেহে মিথোজীবী হিসেবে বাস করে। এরা নিজ দেহ থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। পোষক প্রাণী থেকে পুষ্টি আহরণ করে। অপরদিকে তাদের দেহ থেকে বিচ্ছুরিত আলোক রশ্মি ব্যবহার করে পোষক প্রাণী বিভিন্ন কাজ করে। বিশেষ করে শিকারী প্রাণীকে ভয় দেখাতে, শিকার করতে ও বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীকে আকৃষ্ট করতে পোষক প্রাণী এই আলো ব্যবহার করে।

চিত্র: Vibrio fischeri

মজার বিষয় হলো, ব্যাকটেরিয়ার দেহ থেকে যে আলো বিচ্ছুরিত হয় তার পরিমাণ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যার উপর নির্ভর করে। মনে করা হয়, অল্পসংখ্যক ব্যাকটেরিয়া একসাথে থাকলে তাদের দেহ থেকে তেমন আলো উৎপন্ন হয় না। তবে সত্যিই এমন ঘটে কি না তার সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কম হলে সামান্য আলো বিচ্ছুরিত হয়। এমনটি হতে পারে যে, এই সামান্য আলো দৃশ্যমান হয় না।

কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাকে কোরাম বলে। ঠিক কি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া থাকলে বিচ্ছুরিত আলো দৃশ্যমান হবে তা অনুধাবনের ক্ষমতা ব্যাকটেরিয়ার আছে। এককথায় খুব ক্ষুদ্র জীব হয়েও ব্যাকটেরিয়া তুখোড় মেধাবী। সংখ্যা অনুধাবনের এই ক্ষমতাকে বিজ্ঞানীরা ‘কোরাম সেন্সিং’ নাম দিয়েছেন। ব্যাকটেরিয়া  বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করে কোরাম সেন্সিং করে। ব্যাকটেরিয়া তার চারপাশে এক প্রকার সাংকেতিক পদার্থ নির্গত করে। ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে নিসৃত সাংকেতিক পদার্থের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এরপর এসকল পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার দেহের অভ্যন্তর বা পৃষ্ঠে থাকা নির্দিষ্ট গ্রাহক প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়। গ্রাহক প্রোটিনের সাথে রাসায়নিক পদার্থের সংযোজনকে আমরা তালা ও চাবির সাথে তুলনা করতে পারি।

ব্যাকটেরিয়া পৃষ্ঠের গ্রাহক প্রোটিন দুইটি অংশ বিভক্ত। এর একটি অংশ ব্যাকটেরিয়ার দেহের পৃষ্টে এবং অন্য অংশ দেহের ভিতরে অবস্থান করে। নির্গত সাংকেতিক পদার্থ প্রোটিনের বাইরের অংশের সাথে যুক্ত হয়। ফলে পৃষ্টভাগে যুক্ত সাংকেতিক পদার্থের প্রভাবে ব্যাকটেরিয়ার দেহের অভ্যন্তরে বিশেষ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যেমন : Vibrio fischeri-এর পৃষ্ঠের প্রোটিনের সাথে যুক্ত সাংকেতিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার জিনকে প্রভাবিত করে। ফলে জিন একটি নির্দিষ্ট সংকেত প্রদান করে। এই সংকেত অনুযায়ী নির্দিষ্ট এনজাইম সক্রিয় হয় এবং ব্যাকটেরিয়ার দেহ থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয়। ব্যাকটেরিয়া কীভাবে দেহ থেকে আলো উৎপন্ন করে তা নিয়ে সিলভারম্যান গবেষণা করেছেন। ব্যাকটেরিয়ার এই ধর্ম সম্পর্কে আমাদের জানাটা খুব জরুরি। কারণ এক সময় আমরা মনে করতাম ব্যাকটেরিয়া দলীয়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী নয়। এরা একা একা সকল কাজ করতে ভালবাসে। সিলভারম্যানের বক্তৃতা শুনে আমি অভিভূত। আমি ভাবলাম এই লোকটার মাথায় গ-গোল আছে অথবা তিনি চরম মেধাবী। আমাকে সিলভারম্যানের সাথে গবেষণা করতে হবে। বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমি মঞ্চে উঠে গেলাম এবং তার পোস্ট-ডক্টরেট শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে গ্রহণের অনুরোধ জানালাম। প্রথমদিকে তিনি তেমন আগ্রহ দেখালেন না। অবশেষে তিনি আমাকে গ্রহণ করতে রাজি হলেন। মূলত সিলভারম্যান একজন জিনতত্ত্ববিদ। অপরদিকে আমি জৈবরসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করেছি। দুইজনের গবেষণার গতিপথ এক নয়। তবে তিনি আমাকে তার সাথে গবেষণা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। 

গবেষণায় জেনেটিক্স ও জৈবরসায়নিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য কী?

জিনতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন প্রকার মিউট্যান্ট (জিন পরিবর্তন) জীব তৈরি করতে পারেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে তারা পছন্দের মিউট্যান্ট জীবটি নির্বাচন করেন। সমুদ্রে বসবাসকারী কোরাম সেনসিং ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ দেখা যায়। মনে করুন অন্ধকারে আপনি কিছু ব্যাকটেরিয়া দেখলেন। যদি আপনার কাছে কোরাম সেন্সিং ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিল আছে এমন মিউট্যান্ট জিন থাকে তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন ব্যাকটেরিয়াটি আলো উৎপন্ন করে কি না। কারণ আলো উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাকটেরিয়ার পারস্পরিক যোগাযোগের ওপর নির্ভর করে। এমনকি গবেষণায় আপনি এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেতে পারেন যারা ব্যাকটেরিয়ার দেহ থেকে আলো নিঃসরণের জন্য দায়ী। অপরদিকে জৈবরসায়নবিদরা ব্যাকটেরিয়া থেকে সরাসরি আলো উৎপাদনকারী কণাসমূহ পৃথক করবে এবং তা নিয়ে গবেষণা শুরু করবে। গবেষণার ক্ষেত্রে জেনেটিক্স ও জৈবরসায়নের বিষয়গুলো সত্যিই মজার। দুইটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় আমি অনেক আনন্দিত। কারণ যেকোনো একটি অপেক্ষা দুইটি বিষয় জানাতে আমার গবেষণা অধিক ফলপ্রসু হয়েছে।

কোরাম সেন্সিং নিয়ে গবেষণায় কী শিখলেন?

মাইকের গবেষণাগারে আমি Vibrio harveyi ব্যাকটেরিয়ার কয়েকটি প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করেছি। এই সকল ব্যাকটেরিয়া সমুদ্রে মুক্তভাবে বিচরণ করে। ধারণা করা হয়, এদের কোরাম সেন্সিং পদ্ধতি Vibrio fischeri অপেক্ষা অনেক বেশি জটিল। গবেষণায় দেখা যায় Vibrio harveyi প্রজাতি দুইটি বিশেষ পদ্ধতিতে কোরাম সেন্সিং ক্রিয়া সম্পন্ন করে। এর একটি দিয়ে তারা নিজ প্রজাতির কোষের উপস্থিতি অনুধাবন করতে পারে। অপরটির মাধ্যমে অন্য প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা গণনা করতে পারে। গত কয়েক দশকে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া কোরাম গঠনে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে। এছাড়াও সংকেত প্রদানকারী অণুগুলো বিশ্বের সব প্রান্তের ব্যাকটেরিয়াতে দেখা যায়। তাহলে এটি স্পষ্ট যে ব্যাকটেরিয়া সংকেত অনুধাবন করতে পারে। ফলে ব্যাকটেরিয়া বুঝতে পারে তারা কতজন আছে এবং অন্যরা কতজন আছে? কোনো দলের সংখ্যা গরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরণের কাজ সম্পাদন করে থাকে। এছাড়াও কোরাম সেনসিং পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়া অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারে। আপনার দাঁতে বায়োফিল্ম (দাঁতের উপর বিশেষ পদার্থের আবরণ) তৈরি বা দেহের কোন রোগ সৃষ্টিতে ব্যাকটেরিয়া কোরাম সেনসিং পদ্ধতি অনুসরণ করে। 

বায়োফিল্ম কী? বিস্তারিত বলুন

সাধারণত আমরা মনে করি, ব্যাকটেরিয়া জলীয় পরিবেশে মুক্তভাবে ভাসমান থাকে। তবে বর্তমানে আমরা জানি, বন্য পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বাস করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা বায়োফিলামেন্ট (মোমের মত স্তর) নামক বিশেষ স্তরের সাথে আটকে থাকে। পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া নিজ দেহ থেকে কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য পদার্থ নিঃসৃত করে। নিঃসৃত পদার্থ বায়োফিল্মের ওপর পৃষ্ঠে শক্ত আস্তরণ তৈরী করে যা ব্যাকটেরিয়াকে বাইরের প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। লক্ষ্য
করলে দেখবেন, প্রতিদিন সকালে আমাদের দাঁতের উপরে বায়োফিল্মের স্তর সৃষ্টি হয়। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন প্রায়

চিত্র: বায়োফিল্ম
৬০০ ব্যাকটেরিয়া আমাদের দাঁতের এই বায়োফিল্মে বাস করে প্রতিনিয়ত পুষ্টি সংগ্রহ করছে। নিয়মিত দাঁত পরিস্কার না করলে এসকল ব্যাকটেরিয়া দাঁতে স্থায়ীভাবে  বাস করে এবং দাঁত ক্ষয় হয়। ফুসফুস বা হৃৎপি-ের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যাকটেরিয়া বায়োফিল্মের সাহায্যে ঐ সকল অঙ্গে বাস করে। এসব রোগ কতটা মারাত্মক তা আমাদের অজানা নয়। একবার আ্রকান্ত হলে হৃৎপিন্ড বা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন। কারণ বায়োফিল্ম শক্তিশালী প্রাচীর যা বাইরের পরিবেশ থেকে ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করে। ফলে কোনো ভাবে বায়োফিল্মের প্রাচীরে আবৃত ব্যাকটেরিয়া নিধন করা যায় না। 

 কোন প্রশ্নকে সামনে রেখে আপনার দল গবেষণা করছে?

কীভাবে জীব বাইরের সংকেত বা তথ্যকে তার দেহের ভেতরে রূপান্তরিত করে তা জানা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বাইরে থেকে প্রাপ্ত সংকেতের আলোকে জীব সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া সরল জীব বলে আমরা এটি নিয়ে গবেষণা করছি। তবে এখানেই শেষ নয়। উচ্চ শ্রেণির জীবদেহে বিদ্যমান এমন অজানা রহস্য আমরা মানুষের সামনে উন্মোচন করতে চাই।

তাছাড়া দলবদ্ধভাবে কাজ করার প্রবণতা পৃথিবীতে প্রথম কীভাবে উদ্ভব হল তা নিয়ে আমাদের বিশেষ কৌতূহল রয়েছে। পাশাপাশি, নিচে উল্লেখিত প্রশ্নগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করে।

১.        বহুকোষী জীবের উদ্ভব কীভাবে ঘটল?

২.       আমরা জানি পৃথিবীর প্রথম জীব ব্যাকটেরিয়া। তারা কীভাবে একত্রে কাজ করতো?

৩.       কীভাবে অসংখ্য কোষ একত্রিত হয়ে যকৃৎ বা হৃৎপি- গঠন করে?

উপরের এই সকলপ্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা খুব আগ্রহী। 

 আপনার গবেষণার ব্যবহারিক দিকগুলো কী কী?

একটি মৌলিক প্রশ্ন করেছেন। আমি নিশ্চিত এর উত্তরে আপনারা বিস্মিত হবেন। বর্তমানে আমরা জানি, ব্যাকটেরিয়া দলবদ্ধভাবে কাজ করে, একে অন্যের সাথে কথা বলে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রতিষেধক তৈরিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি কি এমন ঔষধ তৈরি করতে পারবেন যা ব্যাকটেরিয়ার পারস্পারিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবে? যদি পারেন তাহলে তা হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়কর আবিষ্কার। দন্ত চিকিৎসা ও ঔষধ শিল্পের ক্ষেত্রে বড় ধরণের সমস্যা হল বায়োফিল্ম। আমরা বায়োফিল্মের গাঠনিক উপাদান নিয়ে গবেষণা করছি। হয়তোবা আমরা বায়োফিল্ম গঠনের প্রতিরোধক হিসেবে কোনো নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে পারবো।

ক্ষতিকর জীব হিসেবে ব্যাকটেরিয়ার দুর্নাম আছে। তবে ব্যাকটেরিয়া এমন কিছু অলৌকিক কাজ করে যা আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্নভাবে উপকার সাধন করে। বায়োফিল্মকে আপনার শরীরে জড়িয়ে রাখলে তা হবে অনেকটা রোগ জীবাণু প্রতিরোধকের মত। বায়োফিল্ম উৎপাদন করতে পারে এমন ব্যাকটেরিয়া আপনার ত্বকে সবসময় অবস্থান করে ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এমন অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া আপনার অন্ত্রে বাস করে। এরা প্রতিনিয়ত ভিটামিন তৈরি করে এবং খাদ্য পরিপাকে সহযোগিতা করে। অর্থাৎ সব ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়, কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রকৃতিতে রয়েছে।

 জীববিজ্ঞানের নবীন গবেষকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আমি মনে করি, জীবজগৎের বিভিন্ন জীবের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক অনুসন্ধানের প্রতি আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে হবে। গত চার বিলিয়ন বছর ধরে ব্যাকটেরিয়া এই পৃথিবীতে অবস্থান করছে। এছাড়াও কয়েকশত মিলিয়ন বছর ধরে এটি বহুকোষী জীবদেহে বাস করছে। ফলে এই বিষয় নিয়ে গবেষণায় আমরা জীববিজ্ঞানের নতুন নতুন রহস্য উন্মোচন করতে পারব।

 সূত্রঃ ক্যাম্পবেল বায়োলজি (প্রাণরসায়ন ইউনিট), অনুবাদকঃ রফিকুল ইসলাম; প্রকাশকঃ ল্যাববাংলা


 

2 comments:

Powered by Blogger.