কুইন অব ক্রিস্টালোগ্রাফি
যেকোন রাসায়নিক যৌগের গঠন বোঝার সর্বোত্তম কৌশল হচ্ছে এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফি। এ প্রক্রিয়ায় একটি যৌগের কেলাসের উপর এক্সরে বীম ফোকাস করে উদ্ভুত অপবর্তন বর্নালি থেকে রসায়নবিদরা কেলাসের ভিতর পরমাণুসমূহের অবস্থান নির্ণয় করেন। পাশাপাশি এর মাধ্যমে এর গঠন সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন রাসায়নিক গবেষণায় এটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। তবে সর্বপ্রথম ডরোথী হডকিন নামক বিজ্ঞানী জৈব অণুসমূহের গঠন বুঝতে এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ ঘটান। এর মাধ্যমে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ জৈবঅণু যেমন পেনিসিলিন, ভিটামিন বি১২ এবং ইনসুলিন এর আনবিক গঠন সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা লাভ করেন। ১৯১০ সালের ১২ই মে মিশরের কায়রোতে ডরোথী হডকিনের জন্ম। মাত্র ১০ বছর বয়সে রসায়নের প্রতি তার আগ্রহ তৈরি হয় । তবে এই আগ্রহ সৃষ্টিতে তার বাবার বন্ধু ড.এফ.জোসেফ বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হডকিনকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ সম্পর্কে পড়তে ও বিশ্লেষণ করতে উৎসাহ প্রদান করেন। স্যার জন লেমান স্কুলে থাকাকালীন ছেলেদের পাশাপাশি তাকে রসায়ন পড়তে অনুমতি দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রসায়নই সেই জিনিস যা তিনি অন্বেষণ করতে চান। ১৮ বছর বয়সে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে রসায়ন এর উপর অধ্যয়ন শুরু করেন। পরবর্তীতে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জন ডেজমন্ড বার্নাল এর অধীনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এ সময়কালে তিনি এক্সরে ক্রিস্টালোগ্রাফির সাহায্যে প্রোটিনের গঠন নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বার্নাল পেপসিনের উপর এ পদ্ধতি প্রয়োগ করার সময় তিনি এই গবেষণা সহকারী হিসাবে করেন।কোন জৈব অণু বিশ্লেষণের প্রথম প্রয়োগ ছিল এটি। ডরোথী জৈবঅনুর ত্রিমাত্রিক গঠন আবিষ্কার করেন এবং ১৯৪৫ সালে স্টেরয়েড কোলেস্টেরল আয়োডাইড এর গঠন সবার সামনে উন্মোচন করেন। ১৯৪৯ সালে পেনিসিলেনর উপর তার গবেষণা প্রকাশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে তিনি ভিটামিন বি১২ এর গঠন প্রকাশ করেন। এই গবেষণার প্রতিদানস্বরূপ তিনি ১৯৬৪ সালে রসায়নে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। রসায়নে এই প্রতিভাধর বিজ্ঞানীর সম্মানস্বরূপ রয়েল সোসাইটি গবেষকদের জন্য ‘ডরোথী হডকিন ফেলোশিপ’ চালু করে। ১৯৯৪ সালের ২৯শে জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নন্দিতা দাস