পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পদার্থ আবিষ্কার
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি ধাতব বস্তু বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছেন
যে এটিই পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন বস্তু। তারা ভূস্তরের শীলায় ধূলার কণা খুঁজে
পান
বিজ্ঞানীদের মতে এই ধূলি কণা আমাদের সৌরজগত সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে কোনো গ্রহে
তৈরি হয়েছিল। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল ন্যাশনাল
একাডেমি অব সায়েন্সের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তারকা তৈরী হওয়ার সময় কিছু কণা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এই কণা নতুন কোনো
তারকা, গ্রহ বা উপ-গ্রহ বা ধাতুর সাথে মিশ্রিত হয়।
শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের কিউরেটর, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সহযোগী অধ্যাপক
এবং এই গবেষণা পত্রের প্রধান লেখক ফিলিপ হেক বলেন, “এগুলো নিশ্চিতভাবে তারকার কঠিন
কণা অর্থাৎ প্রকৃত তারকা ধূলিকণা। যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজল্যান্ডের একদল গবেষক নিউজল্যান্ডের
মুরসিশন শহরের ভূস্তরের ধাতব উপাদানের ৪০ টি কণা বিশ্লেষণ করেন। ধারণা করা হয় এই কণাগুলো
সৌরজগত সৃষ্টির পূর্বে তৈরী হয়েছিল।
এই গবেষণার সহযোগী জেনিকা গ্রির বলেন, আমরা প্রাপ্ত ধাতব উপাদান প্রথমে গুড়া
করি। যখন পুরো অংশ গুড়া করা হলো তা দেখতে অনেক পেস্টের মত লাগছিল এবং এগুলো বেশ ঝাঁঝালো,
অনেকটা পঁচা বাদামের মত। এরপর প্রাপ্ত পেস্ট এসিড দ্রবণে দ্রবীভূত করা হয়।
কত বছর যাবৎ এই কণার উপর কসমিক রশ্মি নির্গত হচ্ছে তা যাচাই করে কণাগুলোর বয়স
নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ কসমিক রশ্মিগুলো উচ্চ শক্তিকণা যা আমাদের গ্যালাক্সিতে বিচ্ছুরিত
এবং বিভিন্ন কণায় রূপান্তরিত হয়। এই রশ্মির কিছু অংশ অন্য পদার্থের সাথে ক্রিয়া করে
এবং নতুন উপাদান গঠন করে। যতবেশি তারা নিক্ষিপ্ত হবে, তত বেশি উপাদান গঠিত হবে। বিজ্ঞানীরা
তাদের গবেষণায় কণার বয়স নির্ধারণে নিয়ন -২১ আইসোটোপ ব্যবহার করেছেন।
ড. হেক কণা গঠনের প্রক্রিয়া বুঝাতে বলেছেন, এটি অনেকটা কোনো পাত্রে বৃষ্টির পানি জমার মত। যত বেশি বৃষ্টি
হবে, পাত্রে তত বেশি পানি জমবে। কত সংখ্যক নতুন উপাদান আছে তা যাচাই করলে, কতক্ষণ কসমিক
রশ্মি আপতিত হয়েছে তা জানা যায়। গবেষণায় দেখা
গেছে এ কণার উপর ৪.৬ থেকে ৪.৯ বিলিয়ন বছর যাবৎ কসমিক রশ্মি আপতিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে
উল্লেখ্য যে, সূর্যের বয়স ৪.৬ বিলিয়ন বছর এবং পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর।
যাহোক গবেষণায় প্রাপ্ত কণার বয়স আনুমানিক ৭.৫ বিলিয়ন বছর।
তবে বিজ্ঞানী ড. হেক বিবিসিকে বলেছেন, মাত্র শতকরা ১০ ভাগ কণার বয়স ৫.৫ বিলিয়ন
বছরের বেশি, শতকরা ৬০ ভাগ কণার বয়স ৪.৬ থেকে ৪.৯ বিলিয়ন বছর, বাঁকী কণার বয়স এই দয়ের
মধ্যে। আমি নিশ্চিত মুরিসনের খনিতে বা অন্যান্য ধাতব পদার্থে এর চেয়ে অধিক বয়সী কণার
অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে যা আমরা এখনো পায় নি”।
সূত্রঃ বিবিসি