-->

মারবার্গ ভাইরাস কতটা ভয়ংকর?

 মানুষ ছুটে চলেছে তার আপন গতিতে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত জীবন যাত্রার ধরণ বলাচ্ছে। নিজেকে সুস্থ রাখতে, রোগ থেকে মুক্তি পেতে যেন প্রচেষ্টার শেষ নেই। তবে মানুষের জীবনের পথে প্রতিনিয়ত হুমকি হয়ে দাড়াচ্ছে নতুন নতুন রোগ। একদিকে বিদ্যমান রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে মানুষ দিশেহারা, অন্যদিকে নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব মানুষের জীবনযাত্রার ছন্দপতন করছে। আণুবীক্ষনিক সব অণুজীবের দরুণ দেখা মিলছে নতুন নতুন রোগের। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা পাওয়া নতুন এক রোগের কারণ মারবার্গ ভাইরাস। ইতিমধ্যে উত্তর পশ্চিম তানজানিয়ায় এই ভাইরাসের কারণে পাঁচজন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। দেখা গেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের লক্ষণ অনেকটা ইবোলা ভাইরাসের মতো। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, মাংসপেশীতে ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমি হয় এবং চূড়ান্তভাবে প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হন।


সাম্প্রতিক বছরে এই ভাইরাসের কারণে প্রায় একশত মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তার অধিকাংশই আফ্রিকায়।

মারবার্গ ভাইরাস কী? কতটা ভয়ংকর?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রায় অর্ধেক মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে, যেখানে অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবে শতকরা ২৪ থেকে ৮৮ ভাগ মানুষ মারা যায়। ১৯৬৭ সালে জার্মানির মারবার্গ ও ফ্রাংফুট শহরে এই ভাইরাসের প্রথম দেখা মেলে। সেই সময় ৩১ জন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং তাদের মধ্যে সাতজন মৃত্যুবরণ করে। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণ হিসেবে উগান্ডা থেকে আমদানিকৃত আফ্রিকান সবুজ বানর বলে বিবেচনা করা হয়। তবে অন্যান প্রাণীর সাথে এই ভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে। বাদুরের প্রাদুর্ভাব বেশি এমন এলাকার গুহা ও খনিতে বসবাসকারী মানুষের মাধ্যমে ব্যাপকহারে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে কয়েকটি দেশে দেখা গেলেও বর্তমানে বিষুবীয় গিনি, ঘানা, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়েতে এই ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলাতে  এই ভাইরাসের কারণে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। আফ্রিকার বাইরে গত চল্লিশ বছরে মাত্র ‍দুইজন মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের একজন ইউরোপের, অন্যজন যুক্তরাষ্ট্রের।


মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ

মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেকটা ইবোলা ভাইরাসের মতো লক্ষণ প্রকাশ করে। গবেষকদের মতে মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে একজন রোগীর দেহে জ্বর, প্রচন্ড মাথাযন্ত্রণা ও মাংসপেশীতে ব্যাথা হয়। আক্রান্ত হওয়ার তিন দিন পর রোগী ডায়রিয়া, পাকস্থলিতে ব্যাথা, বমির উদ্রেগ ও বমি হয়। এমনকি আক্রান্ত রোগীর দেহে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় যার ফলে রোগী রক্তশূন্যতায় ভুগে।

কীভাবে ছড়ায়?

গবেষকরা মারবার্গ ভাইরাস ছড়ানোর বাহক হিসেবে আফ্রিকান সবুজ বানর ও শুকরকে চিহ্নিত করেছেন। মিশরীয় রুসেট বাদুরের দেহে এই ভাইরাস অবস্থান করে। মিশরীয় ফল ব্যাট বা মিশরীয় রুসেট হল মেগাবাটের একটি প্রজাতি যা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভূমধ্যসাগর এবং ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যায়। মানুষের দেহ থেকে নিঃসৃত যে কোনো তরল পদার্থ যেমন রক্ত, পুঁজ, কাশি, লালার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলেও তার রক্ত বা লালায় কয়েক মাস অবধি ভাইরাস সক্রিয় থাকে।


মানুষের জন্য এই ভয়াবহ এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এখন অবধি আবিষ্কৃত হয় নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এই ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ বা থেরাপি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চলছে।

 

সূত্র: বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.